এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মেসেঞ্জিং অ্যাপ হলো Whatsapp, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা সত্বেও এবার Whatsapp এর বিকলপ এর শুরু করে দিয়েছেন বিশ্বব্যাপী ইউজাররা। তার কিছু সঙ্গত কারণ রয়েছে। কিছুদিন আগে হোয়াট্সঅ্যাপ ঘোষণা করেছেন তার privacy policy ঢেলে সাজানোর জন্য। আর WhatsApp privacy policy না মানলে ইউজারের একাউন্ট ডিলিট করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্লাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ।


হোয়াটসঅ্যাপ প্লাটফর্ম তার শর্তও গোপনীয়তার নীতি বদল করার ফলে আপনার মোবাইল নাম্বার, ফোনের তথ্য, আইপি অ্যাড্রেস, গ্রাহকের বার্তা বিনিময় এর প্রকৃতি, লেনদেনের তথ্য, এমনকি লোকেশন হিস্ট্রি এবং আরো একাধিক তথ্য তারা তুলে দিতে পারে Facebook এর সার্ভারে। শুধু ফেসবুক নয়,হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ আগামী দিনে ফেসবুকের মালিকাধীন অন্য সংস্থাগুলির সঙ্গেও গ্রাহকতথ্য ভাগ করে নেবে বলে জানিয়েছেন তারা।



তবে এর বিকল্প কি? হোয়াটসঅ্যাপ এর বিকল্প কি আছে? 


এই বিতর্কে ঘি ঢেলেছে টেসলার CEO এলন মাস্ক। টুইট করে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সরাসরি Whatsapp এর বিকল্প এক Signel ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আর মাস্কের একটা টুইটে বাজিমাত করে Signal। ঠিক যেন খেল খতম পয়সা হজম হয়ে যায় জাস্ট কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে। গ্রাহকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে Signal এ একটা সময় এমনই বিপুল পরিমাণে নতুন গ্রাহক রিকোয়েস্ট আসতে থাকে যে, কোম্পানি ভেরিফিকেশন লিংক পেতে নাজেহাল অবস্থা হয় গ্রাহকদের। যদিও দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান করে কামব্যাক করে Signal।



Signal - এর জন্ম কিভাবে?

সিগনালের দুই প্রতিষ্ঠাতার নাম জ্যান কোউম এবং ব্রায়ান অ্যাক্টরন। তারা দুজনেই মার্ক মার্ক জুকারবার্গ এর কোম্পানি Facebook এর সঙ্গে প্রায় শুরু থেকে কাজ করতেন। তারা মধ্যে  আবার ব্রায়ান অ্যাক্টন ছিলেন Whatsapp এর সড় প্রতিষ্ঠাতা । কিন্তু সেই  Facebook এর  প্রাইভেসি পলিসি নিয়ে কিছু  বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে পরবর্তীতে ফেসবুক ছেড়ে বেরিয়ে আসেষ কোউম এবং  অ্যাক্টন দুজনেই। তার কিছু দিনের  মধ্যে Signel নামক একটি নতুন ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং অ্যাপ এর জন্ম হয়।


তবে এতদিন‌ Signal Apps টি কারা ব্যবহার করেছে?


ইস্টার্ন মেসেঞ্জিং প্ল্যাটফর্ম Signal অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন সাংবাদিক আইনজীবী, ভিন্নমতাবলম্বীর, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্বের সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা। আর এই ধরনের ব্যক্তিত্বদের Signal app ব্যবহার করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারন হল এর গোপনীয়তা।



এবার দেখে নেওয়া যাক কেন Whatsapp এর বদলে Signal ব্যবহার করবেন?

WhatsApp Messenger telegram এর মতই আর একটা পোস্টার মেসেঞ্জিং প্লাটফর্ম এর নাম হলো Signal। এই সিগনাল আসলে একটি ক্রস-প্ল্যাটফর্ম এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ।ইতিমধ্যেই এই ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের অন্ততপক্ষে এক কোটি ইউজার আছে।কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ এর বদলে সিগনাল অ্যাপ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি এলন মাস্ক। তাতো নিশ্চয়ই কিছু কারণ থাকবে। দেখে নেই আপনার সুরক্ষার জন্য কি কি প্রটেকশন আছে এই অ্যাপসে।


১. কোন বড়োসড়ো কর্পোরেশনের সঙ্গে জুড়ে নেই এই Signel অ্যাপ।

Signal Messenger LLC, যা কাজ করে non-profit অর্গানিজেশন সিগন্যাল ফাউন্ডেশন এর ব্যানারে। ফেসবুক ছেড়ে আসার পর এর প্রতিষ্ঠা করেন ব্রায়ান অ্যাক্টন, জিনিস সিগন্যাল এর জন্য মাত্র 50 মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন। টেক্সটের এনক্রিপটেড ভার্সনের জন্য অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে সিগনাল অ্যাপটিকে। এই সিগন্যাল হোয়াটসঅ্যাপের মতো কোনো বড় কোম্পানির সঙ্গে জুড়ে নেই। এটি একটি non-profit অর্গানিজেশন, যা কখনো কোনো মালিকানা থাকবে না। এই অ্যাপ এর যেকোন ডেভেলপমেন্ট সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে গ্রান্টের উপরে এবং সেখান থেকে চলবে এই ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ।

২. Signal অ্যাপ এর ভিতরে কি রয়েছে তা সবাই দেখতে পাবেন
 
ইনস্ট্যান্ট একইসঙ্গে গ্রাহকের সম্পর্কের মধ্যে যথেষ্ট স্বচ্ছতা রয়েছে। এর প্রাইভেসি থেকে শুরু করে সোর্সকোড জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এর অর্থ হলো,বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা সিগন্যালের কোড এবং আমিতো অসুবিধার দিকগুলি খতিয়ে দেখতে পাবেন এবং মেসেঞ্জার বা হোয়াটস অ্যাপের মত দ্রুত সমাধান সূত্র বের করে দিতে পারেন।


৩.Signal এ সবকিছু encrypted, এমনকি আপনার GIF ও
 
আমরা প্রোফাইলে নানা রকম ছোট ছোট মুভিং পিকচার পাঠাই। যার সুবিধা হোয়াটসঅ্যাপে আছে কিন্তু আপনি দেখতে পাবেন এটি GIPHY নামে একটি ব্র্যান্ড এই GIF গুলি আমাদের প্রদান করে থাকে। এই GIPHY হল ফেসবুকের কেনা সংস্থা। তারমানে আপনি কি GIF  পাঠাচ্ছেন  তারও রেকর্ড থাকছে ফেসবুকের কাছে। কিন্তু সিগন্যালে আপনি যদি GIF সার্চ করেন, তাহলে দেখতে পাবেন এটা সিগন্যাল সার্ভার থেকে আপনার ফোনে সরাসরি GIF পাঠিয়ে দিচ্ছে।


৪. Signal  আপনার চ্যাটের ব্যাকআপ সুরক্ষিত রাখে অন্য কোন সার্ভারে না পাঠিয়ে।


সিগন্যাল কখন চ্যাট মেসেঞ্জারের অসুরক্ষিত ব্যাকআপ ক্লাউডে পাঠায় না। সেগুলি যে কেউ পড়তে পারে গুগোল কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মতো। তার বদলে সেগুলি এনক্রিপটেড ডেটাবেস হিসেবে আপনার ফোনে সুরক্ষিত রাখা হয়, যার চাবি থাকে একমাত্র আপনার হাতে।সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো আপনার গুরুত্বপূর্ণ কন্টাক্ট লিস্ট কোন সার্ভারে আপলোড করে না সিগন্যাল।

৫. গ্রাহকের তথ্য গোপন রাখার সব ফিচার সবার প্রথম এনেছে এই অ্যাপসটি

আমরা অনেক পরের আপডেটের দেখেছি হোয়াটসঅ্যাপে ভুল করে যদি মেসেজ করতাম কাউকে তাহলে সেটি ডিলিট করতে পারতাম। কিন্তু সিগন্যাল তার জন্মলগ্ন থেকে এই ফিচারের অধিকারী। শুধু তাই নয় এখানে আপনি 10 সেকেন্ড থেকে শুরু করে 1 সপ্তাহ অব্দি কোন মেসেজ কি ডিলিট করার অনুমতি দিয়ে দিলেন। আপনার পাঠানো মেসেজটি 1 সপ্তাহ পরে অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যাবে। এছাড়াও এতে রয়েছে আপনি কোন মিডিয়ার ফাইলকে শুধুমাত্র একবারই দেখতে পাবেন ( One time viewable media)। এই ধরনের উন্নত প্রযুক্তি হোয়াটসঅ্যাপে নেই।


৬. আপনি কি জানেন Whatsapp আপনার কিবোর্ডে উঁকি মারছে কিনা।Signal করে না।

সিগন্যালে আরও এমন একটি  আকর্ষণীয় ফিচার রয়েছে, যা ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্লাটফর্মগুলির প্রায় কারও কাছে নেই। সেরকমই এক ফিচারের নাম ইনকগনিটো কিবোর্ড অপশন। অনেক সময় দেখবেন কোন এ্যাপ এ গিয়ে আপনি চাই টাইপ করছেন। তার সাজেশন আপনাকে দেখানো হচ্ছে।কিন্তু সিগন্যালের এই ইনকগনিটো কিবোর্ড ফিচার এর সাহায্যে আপনার কিবোর্ড কোন কিছুতেই অভ্যস্ত হবে না। অর্থাৎ আপনার কি কোন সাজেশন দেখাবে না। জুবলি সচরাচর হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে হয়ে থাকে। তাছাড়াও অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের জন্য সিগনালে রয়েছে স্ক্রীন সিকিউরিটি নামক আরও একটি ফিচার যার সাহায্যে অন্যকোন অ্যাপ থেকে আপনি সিগনালে কি টাইপ করছেন এসবের কিছুই দেখা যাবে না।

সবশেষে বলবো, সিগনাল অ্যাপ গোপনীয়তা থেকে শুরু করে নিত্য নতুন ফিচার সবদিক থেকেই সেরা। আপনি এবং আপনার বন্ধু দুজন এই মেসেজ যদি কেবলমাত্র দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান তাহলে Google Play Store বা App Store  গিয়ে লিখুন Signal.org পেয়ে যাবেন এই অমূল্য্য্য মেসেজিং অ্যাপটিি।


 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানান।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন